Header Ads Widget

খোলা চিঠি ( কবিতা সংকলন)

 



খোলা চিঠি


অতনু সরকার




মা,আমি তোমার স্মৃতি,তোমার মেয়ে


হয়ত তুমি ভূলে গেছ আমাকে,


কিন্তু আমি ভূলিনি, ভূলতে পারিনি৷

মা গো কত বার ভূলতে চেয়েছি

ভেবেছি তোমাকে আর বাবাকে

কখন মনে করব না, পারিনি৷

তোমরা দুজনে কামনার আগুনে পুড়ে

জন্ম দিলে আমাকে.....তার পর 

যখন বছর বার,

তখন পাঠালে কাজে৷

পরে জানলাম বাবা কাজে

পাঠানোর নাম করে আমায়

বিক্রি করে দিয়েছে বুড়টার কাছে৷

মা,

যেদিন আমায় বুড়টা নিয়ে এল

সেদিন রাতে পশুর মতোঝাপিয়ে পড়েছিল 

আমার উপর৷

তার পর...........সব শেষ ৷

ধর্ষিত হতে হতে আমি ক্লান্ত৷

এখন আমি পতিতালয়ে থাকি৷

আমার পরিচয় জবা নামে,

সেই বুড়টাই আমাকে এখানে বিক্রি

করেদিয়েছিল টাকার লোভে৷

মাগো, 

আমায় ঘৃনা করবে জানি

কিন্তু তার থেকে বেশি ঘৃনা

আমি তোমাকে করি

কেন তুমি মা হয়ে মেয়েকে

ঠেলে দিলে অন্ধকারে?

কি উত্তর দেবে জানি না,

মা,

আমি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত

আমি বাঁচব না৷

মাঝে মাঝে মুখদিয়ে রক্ত উঠে৷

যন্ত্রনায় ছিড়ে যায় শরীর

তবু আমাকে দাঁড়াতে হয়

লাল বাতির তলায়৷

মা,

তোমার মেয়ে হয়তো মরবে

এই মাত্র রক্ত বমি হল,

আমার নারীত্ব নিয়েছে লোভী পুরুষ

আর শুকুন ছিড়ে খাবে শরীর৷

মা.. গো আর কোন মেয়ে যেন

এই পথে না আসে৷

এই নরক যন্ত্রনা যেন 

কেউ না পায়৷

শিশু কালের স্মৃতি

যৌবনের জবা হয়ে

রক্তে বিষ নিয়ে মরবে৷

মাগো তুমি ভালো থেকো

ঘৃনা করলেও তুমি মা !!



আমার লক্ষী

অতনু সরকার

তোমার লক্ষ্মী তোমার ঘরে

লক্ষ টাকার গয়না পরে।

আমার লক্ষী পথে পথে

দু'মুঠো অন্ন ভিক্ষা করে।।

তোমার লক্ষ্মী মৃন্ময়ী রূপ

গায়েতে দামি শাড়ি।

আমার লক্ষী ফুটপাতের ধুলায়

দেয় গড়াগড়ি ।।

তোমাদের লক্ষ্মী দামি অনেক

মাটি দিয়ে গড়া ।

আমার লক্ষী মানবী মেয়ে

তাই সে সর্বহারা।।

আমার লক্ষী সাঁতরে পার হয়

সাত সমুদ্র তের নদী।

আমার লক্ষী তেজস্বীনী পায়ে ভেঙ্গে

দেয় অহংকারের গদি।।

আমার লক্ষ্মীর ভাঙ্গা বাড়ি

গায়ে ছেড়া জামা।

আমার লক্ষী খেতে পায়না

মাটিতে দেয় হামা।।

মাটির লক্ষ্মীর সামনে যত

দামি দামি সব খাবার।

আমার লক্ষী তখন হয়

লালসার শিকার।।

তোমাদের মাটির লক্ষ্মী পুজো পাক

তোমাদের ঘরে ঘরে।

আমার লক্ষীর জন্য আমি

প্রার্থনা করি দ্বারে দ্বারে।।

যেদিন তোমরা পুজো করবে

আমার মানবী লক্ষ্মীকে,

সেদিন আমি তোমাদের পদধূলি

নেব আমার মস্তকে।।

(কোজাগরী পূর্ণিমা, 2017)





জীবন মাঝি


অতনু সরকার

মেঘে মেঘে বেলা গেল,

পড়ে এলো  জীবনের বেলা।

অন্ধকার জীবন স্রোতে

ভাসিয়েছি আমার জীবন ভেলা।

বেলা চলে যায় ও মাঝি ভাই

নৌকা ভিড়াও তীরে।

তোমারি আমি খুজে পেতে চাই

লক্ষ মাঝির ভিড়ে।

ভাঁটা গেল জোয়ার এলো

তবু তোমার দেখা নেই।

সবাই মিলে এক একে

তুমি গেলে কই?

জীবন নদীর মাঝি

তোমার জন্য এই ঘাটে বসে আছি।

জীবনের বেলা বয়ে যায়

তাই বসে আছি ভব নদি পারে।

প্রেমের ঠাকুর তুমি

পার করে দাও আমারে।।



তোমার নূপুরের ধ্বনি বাজে

অতনু সরকার

জৈষ্ঠ গেল রসে বসে,

আষাঢ় গেল জলে।

বৃষ্টি মুখর দিনগুলি সব,

রইল ডানা মেলে।

বৃষ্টিভেজা তুমি আমি

বৃষ্টি ভেজা মন।

গোপন অন্ধকারে কখনো মিলেছে,

দুটি নতুন জীবন।

শ্রাবণ এতে জল টলমল

নদীর কূলে কূলে।

তুমি আর আমি মেলে ছিলাম ডানা।

সেদিনের সেই স্মৃতিগুলো

জানি আর আসবে না।

এখন জ্যৈষ্ঠের পরেই আষাড় আসে

আকাশে ভাসে মেঘোমালা

বৃষ্টির জলে ভিজি, যখন মনে পড়ে

সেদিনের সেই কিশোরী বালা

হারিয়ে গেছ তুমি অনেক দূরে

আসবেনা আর কাছে।

তবু বৃষ্টির দিনে কানের কাছে

তোমার নূপুরের ধ্বনি বাজে।।



মাটির ময়না

গ্রামের পথে পথে হেঁটে চলে

আপন মনে, আপন খেয়ালে, আপন কাজে।

ভ্রমর কালো চুল, নিকষ কালো চোখ,

শ্যামলা গায়ের শ্যামলা মেয়ে।

কাজল টানা চোখ, অদ্ভুত চাহনি

আমার হৃদয়ে তোলপাড় করে

এসেছিল একদিন সেই মেয়ে।

কাঁখে কলস নিয়েবহেটে যেতে দেখেছি

গ্রাম্য নদীর পারে।

আমি তখন সদ্য যুবক,

তুমি তখন প্রাণোচ্ছল এক কিশোরী।

একদিন দুজনার মন হল দেওয়া-নেওয়া।

আজি তুমি অন্যের ঘরনী

তুমি সুখী এতেই আমার সুখ।

আমি অন্ধকারেই নীরবে-নিভৃতেই

আজও মনে করার চেষ্টা করি

দু একটা একটা সুখের মুহূর্ত ।

আজও দেখি লাল শাড়ি পরা

সেই মাটির ময়নাকে

প্রানের  আবেগে হৃদয়ের হরষে

মনে ঝড় তুলে হেঁটে যেতে।

যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে বুক

কিছু বলার অধিকার নেই আজ।







রক্ত দানব

বসন্তের আবির যখন রাঙিয়ে দেবে

তোমার আমার সপ্ন।

যখন আমার শিশুর মুখে আনন্দের

রং দেখে গর্বিত হব,

ঠিক তখন সিরিয়াতে কোন পিতা

রক্ত মাখা সন্তানের দেহ কোলে নিয়ে,

তাকিয়ে থাকবে আকাশের দিকে।

চোখের জল হয়তো তখন

শুকিয়ে যাবে তার ।

রক্ত দানব আজ কেড়ে নিয়েছে

শত শত ফুলের মত

কচি শিশুর প্রাণ ।

বন্দুকের নলের সামনে

রক্তদানবের রক্ত পিপাসার

শিকার ফুলের মতো কচি কচি শিশু।

রক্তের হোলি উৎসব সমগ্র সিরিয়া জুড়ে

মানবিকতা ভূলুণ্ঠিত আজ

বিশ্বের পথে পথে।

রক্তদানবের দল কেড়ে নিয়েছে

বিশ্বের সকলের আনন্দের প্রতিটি মুহূর্ত।

       



আমি স্বপ্ন দেখি


একদিন নিপাত যাবে রক্তদানবের দল।

সমগ্র বিশ্ব জেগে উঠবে দানবের বিরুদ্ধে,

ইতিহাসের কালচক্রে কোন দানব

দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্য গড়ে না।

"তাই আমারও বিশ্বাস",

আবার সিরিয়াজুড়ে কচি কচি শিশুর

হাসিতে আন্দোলিত হবে গাছের পাতা,

গেয়ে উঠবে পাখির দল, নেচে উঠবে নর্তকী,

নিপাত যাবে রক্ত দানব।।। 

 হে নারী তুমি সৃষ্টি করেছ নতুন,

জন্ম দিয়েছ নর নারী।

তোমাতে সৃষ্ট জগৎ আবার তুমি

রক্ষা করে চলেছ সংসার ঘর বাড়ী।

সৃষ্টির জন্ম লগ্ন থেকে তুমি

ধারন করেছ যে সন্তান,

সেই তোমাকে কাঁদিয়েছে বেশি

সেই করেছে বেশি অপমান ।

অপমানের আর এক নাম তুমি,

যন্ত্রনার আর এক নাম তুমি ।

তুমি সেই নারী তুমি সেই জগৎ মাতা,

তুমি সেই প্রতিবাদী তুমি সেই কণ্যা।

তোমাকে দেখেছি রাস্তা - ঘাটে - মাঠে,

তোমাকে দেখেছি প্রতিবাদে পথ হেঁটে যেতে।

তুমি মাতা,  তুমি কণ্যা, তুমি আবার জায়া,

জীবন জুড়ে রয়েছে শুধু তোমার ছায়া ।

পৃথিবীর সব স্থান হোক তোমার কাছে মুক্ত,

সমাজে নারী শক্তি হোক জাগরিত ।।





দহন দাহে


গ্রীস্ম গেল দহন দাহে

পুড়িয়ে গেল মন,


গ্রীস্ম গেল ঘুমের দেশে

জুড়াল এই জীবন।

গ্রীস্ম গেল যা পথে

সেই পথে এল বর্ষা ।

তাপের থেকে রক্ষা পাব

দিল এই ভরসা।

বর্ষা এলো টাপুর টুপুর

দূর্বাঘাসের মাথায়

বর্ষা এলো টাপুর টুপুর

কচি বাঁশের পাতায়

রাস্তার ধুলো কাদা হয়ে গেল

নদী ভরে গেল জলে।

বিরহিরা সব বাড়ি ফিরে যায়,

যে যার কাজ ছেড়ে।

কাঁদিছে আষাঢ় দুঃখে তাহার

কি জানি কোন মহাশোকে,

দুঃখের ম্লান ঢেউ যেন তার


জাগিয়ে তোলে মোর বুকে।।



আমি বৃষ্টি হতে চাই


আমি বৃষ্টি হতে চাই

বৃষ্টি ভালবাসি তাই।

আগুনঝরা দুপুরে কৃষকের তপ্ত গায়ে

শান্তির জল হয়ে পড়বে ঝরে।

ফাটা ফুটো মাঠের বুক

ভিজিয়ে দেবে আমার জলে।

আমি চঞ্চল করে তুলবো

  কিশোরীর দুচোখ।

উঠোনে ধান শুকোতে দেবে সে,

ব্যস্ত করব তাকে বারবার।

তার কপাল বেয়ে, অধর বেয়ে

টুপ করে ঝরে পড়বো তার বুকে।

আমি বৃষ্টি হতে চাই

বৃষ্টি ভালবাসি তাই।

চঞ্চল কিশোরীর শরীর

ভেজাবো ফোটা ফোটা জলে

নেব তার গায়ের সুবাস।

সুন্দরী যুবতীর শরীর জুড়ে থাকবো

তার যৌবনের পরশ মেখে নেব গায়ে ।

আমি বৃষ্টি হব ,

আমি বৃষ্টি হতে চাই

বৃষ্টি ভালবাসি তাই।





নিষিদ্ধ পল্লীতে এক রাত


এক অদম্য আশা  নিয়ে, উত্তেজনা নিয়ে

তোমার কাছে ছুটে এসে ছিলাম।

তুমি তা পার তুমি তা পারবে,

এ ছিল আমার বিশ্বাস।

কিন্তু তোমার মুখোমুখি হয়ে

যখন বসলাম, জানলাম তোমাকে

তোমার চোখের মধ্যে হারিয়ে গেলাম।

তোমার নগ্ন শরীর কে সামনে রেখে,

বসে রইলাম সারা রাত।

তোমার বানিজ্যিক হাত

আমাকে স্পর্শ করে,

আমার পুরুষাঙ্গ ছুঁয়ে যায়।

আমার শরীর জাগে না।

তোমার স্তনের প্রতি আকৃষ্ট হয় না -

আমার হাত, আমার ওষ্ঠ।

তোমাকে খোঁজার চেষ্টা করি

ফেলে আশা পাতায়

মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলির  কথা

তোমার জন্য গেটে দাঁড়িয়ে থাকা

প্রেমিক ছেলের দল।

সেই তুমি আজ এই নিষিদ্ধ পল্লীতে।

একরাশ হতাশা নিয়ে

ভোর রাতে বাড়ি ফিরি।

জামা কাপড় খুলে রেখে

যাই পাশের পুকুরে

সাঁতার কাটতে থাকি…...।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ