Header Ads Widget

দশ বছর পর (২)

 

দশ বছর পর হঠাৎ এক বিয়েবাড়িতে মুখোমুখি দাড়ায় রোদ্দুর আর বৃষ্টি। দশ বছর আগে যখন প্রেমিকা বৃষ্টির বিয়ে হয়ে যায় তখন সে ছিল বেকার। বিয়ের পর দুজনের দেখা হয়েছে কথা হয়নি কখনো। বুক ফাটা অভিমান দুজনকে আলাদা করে রেখেছিল। হঠাৎ মুখোমুখি দুজনই বাক্যহারা। রোদ্দুর প্রথম কথা বলে। 

- কেমন আছো ? 

হঠাৎ বৃষ্টির চোখে দু ফোটা জল। দুজনাই সরে আসে একটু আড়ালে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বৃষ্টি বলে - চেহারাটা কি করছে? নিজের দিকে খেয়াল কর না কেন? এখনো কি রাত জেগে বই পড়ো, চোখের পাওয়াটাও বেড়েছে নাকি? 

রোদ্দুর একটু হাসে কোন কথার উত্তর দেয় না।

শুধু তাকিয়ে থাকে  শ্যামলা মেয়ের কাজল কালো চোখের দিকে। 

বৃষ্টি বলে- কি দেখছো অমন করে? 

রোদ্দুর উত্তর দেয় - তোমাকে শুধু তোমাকে। কারণ আজও রাতের অন্ধকারে চোখ বুজে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখি না। 

হঠাৎ বৃষ্টি রোদ্দুরের হাতটা চেপে ধরে। বৃষ্টির চোখে তখন জল। রোদ্দুরের শরীরটা কেঁপে ওঠে। হঠাৎ বৃষ্টির মেয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় মাকে । বৃষ্টি চলে যায় শিকড়ের টানে।রোদ্দুর দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে।


প্রথম প্রেমের আত্ম কথা


জীবনের প্রথম অনেক ঘটনাই চেষ্টা করেও ভোলা যায় না সারা জীবন।বহু বহু ঘটনা আছে যেসব ঘটনার সঙ্গে জীবনের প্রথম স্মৃতিগুলি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা হয়ে থাকে। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সেই সব স্মৃতি গুলো মনের মনিকোঠায় ভেসে থাকে। শৈশবের ফেলে আসা স্মৃতি শৈশবের খেলার মাঠ বন্ধু এমনকি শৈশবের প্রথম ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা

বা যে কোনো ঘটনায় মানুষের মনের মধ্যে একটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, জি ফটোস থেকে যায় সারাজীবন। ঠিক তেমনি একটি ক্ষত হলো জীবনের প্রথম ভালোবাসা। অবশ্যই সেটা যদি সত্যি কারের হয়। সত্যি কারের ভালোবাসা কখনো মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। হয়তো আপনার জীবনে অনেক সুন্দরী বা সুন্দর যুবক আসবে কিন্তু জীবনের প্রথম মেয়ে বা ছেলেটি জন্য কেউ ভুলতে পারে না।আমার জীবনের এমন বহু ঘটনায় আছে যেগুলি আমি আজও ভুলতে পারিনি কারণ সেগুলো ভোলার মতন ঘটনা নয়। অথচ সাধারণ মানুষের কাছে সেই ঘটনা হয়তো অতি সাধারন অথবা কোন ঘটনাই নয়।জীবনে যখন

প্রথম কিছু করি সেই প্রথম ঘটনাগুলো প্রতি ক্ষেত্রেই যৌবনের শেষ লগ্নে কিছুতেই ভুলতে পারিনা। আমার প্রথম ভালোবাসা ঠিক কীভাবেই কখন এসেছিলো বলতে পারি না। এমনি করেই হয়তো সবাইকার জীবনে নিরবে নিবৃত্তে ভালোবাসা আসে তারপর একটু একটু করে সেই ভালোবাসা জমাট বাঁধতে থাকে। আমি রোদ্দুর। হয়তো তাই মেঘ আর

বৃষ্টি কেই ভালোবেসেছিলাম। মেঘের মতো গায়ের রং আর বৃষ্টির মত সরল ছিল মেয়েটা। কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছিলাম সেসব কথা আমার মনে নেই কিন্তু ভালো যে বেশি ছিলাম সেটা আজও অন্তরে অন্তরে অনুভব করি। রোগা পাতলা শ্যামলা একটি মেয়ে। খুব বেশি যে আধুনিকা স্মার্ট তাও নয়। অথচ একদিন সেই শ্যামলা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু  খেলাম। ঘটনাটা কেমন অদ্ভুত একটা ব্যাপার। হয়তো যৌবনের আবেগে শ্যামলা মেয়ের চোখে দেখেছিলাম দীঘল কালো অতল গভীরে লুকিয়ে থাকা কোন এক ভালোবাসার রাজকন্যা কে। হয়তো তাই প্রথম যৌবনে তাকে ভালোবেসে ছিলাম না। অনেক সুন্দরী নারীকেই ভালবাসতে পারতাম হয়তো কিন্তু কেন জানি না এই শ্যামলা মেয়ে বৃষ্টির প্রেমে কখন আমি ডুবে গেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম বেকারত্বের বোঝা বয়ে যখন ক্লান্ত ঠিক তখনই বৃষ্টি এলো আমার মরুময় বুকে ধরে পরল ঝর ঝর করে। অনুভূতি স্নেহ মায়া মমতা আর ভালবাসায় জড়ানো ছিল তার দুটি চোখ। শ্যামলা গায়ের মধ্যে মুখের গঠন ছিল অপূর্ব সুন্দর চোখ দুটি ছিল টানা টানা যেন প্রতিমার মত।সত্যি বলতে কি আমি তাকে কথা কওনা ভালোবেসে ছিলাম একেবারে আপন করে একেবারে নিজের মতন করে। কিন্তু জীবনের কোন কোন ঘটনা কোন কোন প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কটা একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘটনা দ্বারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তেমনি করে হঠাৎ একদিন বৃষ্টি ও হারিয়ে গেল আমার মরুভূমির বুক থেকে। ঘন কালো চুলের মেঘরাশি টানা টানা চোখ আর করুণার প্রতিমূর্তি বৃষ্টি কিভাবে যেন পাল্টে গেল। একাধিক সম্পর্ক ওকে যেন গ্রাস করেছিল।ঠিক কোনটা করা উচিৎ আর কাকে ভালোবাসা উচিত সেটা হয়তো বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছিল। যাই হোক ওর বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলে অনেক দূরে। আমি তখন বেকার যুবক বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বৃষ্টির বিয়ের দিন আমারও নিমন্ত্রণ ছিল যাব বলে ঠিক ছিল না।কিন্তু কি একটা মনে করে ভাবলাম যাই একবার অন্তত দেখি বিয়ের সাজে হবে কেমন লাগে।ওকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না আমি তাই ছুটে গেলাম বিয়ে বাড়িতে।সরস্বতী পুজো ছিল বোধহয় সেদিন হয়তো সরস্বতী পুজোর পরের দিনই হবে আমি আর আমার এক বন্ধু সরস্বতী পুজোর ভাসান দেখে ফিরলাম তখন রাত 8:00 টা 8:30 হবে বোধ হয়। বাড়ি এসে গুছিয়ে নিলাম বৃষ্টির বিয়েতে যাব বলে।কি একটা অদ্ভুত অনুভুতি এতদিন যাকে মন দিয়ে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসলাম আজ তার বিয়ে বাড়িতে তারই বিয়েতে যেতে হবে আমাকে। মনটাকে শক্ত করি গিয়ে দাঁড়ালাম ওর সামনে ।আমার মনে আছে আমাকে দেখে বেশ কেঁদেছিল হয়তো এটা গোলাপ এগিয়ে দিল আমার দিকে। এগিয়ে গিয়ে নলাম। বহুদিন সযত্নে রাখা ছিল আমার ডাইরির পাতার ভাঁজে। হয়তো আজও শুকনো গোলাপ টা ওই ডায়েরির ভাজে রয়েছে আজো। বিয়ের সাজে বেশ সুন্দরী লাগছিল। ছোটখাটো চেহারা। পাতলা শরীর। টানা টানা চোখ। ওকে দেখে বেরিয়ে আসছিলাম হঠাৎ বৃষ্টি বলল- একটু দাড়াও।

আমি দাঁড়াতে ও নেমে এলো নিচে। আমাকে একটা প্রণাম করেছিল। সেদিন হয়তো অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু ওর আশেপাশে তখন রঙিন সাজে সজ্জিত অন্য অনেক মহিলার ভীড়। ওর দু চোখের

কোনায় দেখে ছিলাম ছল ছল করছে জল। উদভ্রান্তের মত আমি বেরিয়ে এলাম ওর ঘর থেকে। বিয়ের দু'দিন পরেই আমাকে ফোন করে বলল -আমার সঙ্গে পালিয়ে যেতে চায়। আমি অনেক ওকে অনেক সান্তনা দিলাম বোঝানোর চেষ্টা করলাম। যা হয়ে গেছে সেটা কি আর ফিরিয়ে আনা যায় না একটা নিরীহ ছেলের জীবন নষ্ট করা যায় না। বৃষ্টি বলেছিলে রাতে যখন ওর স্বামী ওকে আদর করে তখন আমার কথা মনে পড়ে। আমার কথা ভেবেই ও নাকি ওর...।। যাক সেসব কথা জীবন যন্ত্রণা আর কত কাহিনী কত রকম ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের চারপাশে। আজ আমি আমার বিবাহিত জীবনের মধ্যে দিয়ে কোন রকমই সুখী হতে চেষ্টা করি। কিন্তু একটা জিনিস আমি বেশ লক্ষ্য করেছি যে আমার যখনই ওকে দেখবার ইচ্ছা হয়েছে তখনই মনে মনে অনুভব করেছি ওকে। বিশ্বাস করুন ঠিক তার দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই ও এসে হাজির হয়েছে ওর বাপের বাড়ি। শুনলে হয়তো অবাক হবেন ওর সঙ্গে এখন আর আমি কথা বলি না আসলে ও কথা বলে না আমিও বলার চেষ্টা করি না। কিন্তু যখন ওকে দেখি তখন অন্তরের মধ্যে কোথাও যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করতে পারি। টেলিপ্যাথি বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে তাতে আমি বিশ্বাস করি। আমার যখনই বৃষ্টির কথা মনে হয়েছে, যখনই ওকে দেখতে ইচ্ছা হয়েছে, তখনই মনে মনে শুধু দেখার ইচ্ছাটাই প্রকাশ করেছি আর ভেবেছি একবার যদি সামনে এসে দাঁড়াতে। এমন বহুবার হয়েছে যে আমি হয়তো রাতে ওর কথা ভাবতে ভাবতে শুয়েছি পরেরদিন দুপুরে দেখি ও এসে হাজির। আমার বাড়িতো নয় ওর নিজের বাড়িতে। তবুও তো দেখা হল।আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি যে ও আমাকে একবার অন্তত একবার দেখার জন্য ছটফট করে। ঠিক আমি যেমনটি ওকে দেখার জন্য ছটফট করি আজও। কিন্তু কেন যে ছটপট করি বুঝতে পারি না। আমি জানি ও দুই সন্তানের মা। কিন্তু তবুও সেই কৃষ্ণকায়া শ্যামলা বরণ শরীরটা কিছুতেই যেন আমি মনের থেকে দূরে ফেলে

দিতে পারি না। দু তিনদিন ধরে খুব মনে পড়ছিল বৃষ্টির কথা। পড়ারই কথা যা গরম পড়েছে। গরমে বৃষ্টির ছোঁয়া যেমন শরীরকে স্বস্তি দেয় তেমনি কালো ভ্রমর বৃষ্টি আমার মন কেউ স্বস্তি দেয়। কতবার ভুলতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কখনই ভুলে যেতে পারিনি। কেন যে ওকে ভুলতে পারিনা সে কথার উত্তর আমার কাছে নেই সে কথার উত্তর আমি দিতে পারি না পারবো না। হয়তো ওকে আমি কোন কিছুই দিতে পারিনি আর দিতে পারব না। হয়তো জীবনের এমন অনেক কিছুই ঘটে বা ঘটবে যা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না যেমনটি ভুলতে পারিনি আমার প্রথম প্রেম বৃষ্টিকে। আর আমি ভালো করেই জানি ওকে কখনোই ভুলতে পারবো না। আমার মনের মনিকোঠায় চিরদিনই থেকে যাবে একটি কালো মেয়ের। কাল কথাটি এইজন্যই বারবার উল্লেখ করলাম কারণ মিটার রং যাই হোক না কেন হয়তো আমি ওকে সত্যিই ভালবেসেছিলাম। বিয়ের পরে একদিন এসেছিল আমার কাছে। চেয়েছিল একটা উপহার। যে উপহার পয়সার বিনিময়ে পাওয়া যায় না। আমি কথা দিয়েছিলাম কিন্তু আজও দিতে পারিনি। জানিনা কোনদিন দিতে পারব কিনা। কিন্তু আমার হৃদয় জুড়ে আজও বিরাজ করে সেই কালো ভ্রমর।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ